শেষ হাসি কি স্টার্মারেরই, বাড়ছে প্রত্যাশার চাপ

0
33

সদ্য এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কনজ়ারভেটিভদের নেতা তথা ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছেন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে তিনিই আবার ফিরছেন। তবে ব্রিটেনের জনমত সমীক্ষা কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছে। আর মাত্র দু’দিন পরে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন। সুনক নিজেই অক্টোবরের ভোট এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর সেই ভোটেই এ বার ব্রিটিশ রাজনীতিতে কনজ়ারভেটিভদের শাসনকালের দীর্ঘ অধ্যায় শেষ হতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

জনমত সমীক্ষায় লেবার পার্টির উত্থান স্পষ্ট। বস্তুত, সম্প্রতি স্থানীয় স্তরের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে কনজ়ারভেটিভদের পিছনে ফেলে বহু আসনে জয় পেয়েছে কিয়ের স্টার্মারের দল। আর কয়েক দিন পরে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সেই পরিচিত কালো দরজা দিয়ে হাউস অব কমন্সের বিরোধী দলনেতা তথা লেবার পার্টির নেতা স্টার্মারকেই বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। ফলে ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে এখন বিলেতে চর্চাও চলছে বিস্তর।

লন্ডনের সাউথওয়ার্কে জন্ম হলেও সারের এক ছোট শহর অক্সটেডে কৈশোর কেটেছে স্টার্মারের। খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার ছিল তাঁদের। বাবা কারখানার কর্মী আর মা ছিলেন নার্স। এনএইচএসে পরিষেবা দিতেন তিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন কিয়ের। ফলে লিডস থেকে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই সমাজতন্ত্রের প্রতি টান ছিল স্টার্মারের। সে নিয়ে অনেক লেখালেখিও করতেন। আইন নিয়ে পড়ে স্টার্মার ব্যারিস্টার হন প্রথমে। শ্রমিকদের কাজের সময় নির্দিষ্ট করা নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনও করেছেন এক সময়ে। ‘সোশ্যালিস্ট’ আইনজীবী হিসেবে বহু মানবাধিকার সংক্রান্ত মামলা লড়েছেন। জনপ্রিয় আমেরিকান বার্গার সংস্থার বিরুদ্ধে লড়ে নিজের মক্কেলকে জয়ও পাইয়ে দিয়েছেন স্টার্মার।

২০০৮ সালে সরকারি আইনজীবীদের প্রধান হন স্টার্মার। ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর মাথায় বসানো হয় তাঁকে। সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে ব্রিটেনে তাঁর অবদানের জন্য নাইট উপাধিও পান রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের কাছ থেকে। সেই সময়ে বাকিংহাম প্রাসাদে বাবা-মাকে নিয়ে এসেছিলেন স্টার্মার। বাদ যায়নি বাড়ির পোষা কুকুরটিও।

খানিকটা দেরিতেই রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন স্টার্মার। ২০১৫ সালে প্রথম পার্লামেন্টে আসন জিতে আসেন। ২০২০ সালে জেরেমি করবিনকে হারিয়ে তিনিই হন লেবারদের নেতা।

তবে পারিবারিক জীবন তেমন প্রকাশ্যে আনেন না ৫২ বছরে স্টার্মার। ২০০৭ সালে বিয়ে করেছিলেন ভিক্টোরিয়াকে। স্টার্মারের মায়ের মতো তিনিও এক জন এনএইচএস কর্মী। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। তবে ভোট প্রচারে পরিবারকে কখনও সামনে আনেন না বিরোধী দলনেতা।

অবশ্য প্রবল জনপ্রিয়তার সত্ত্বেও স্টার্মারের পথে কাঁটাও রয়েছে বিস্তর। সম্প্রতি ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে নেতানিয়াহু সরকারের পক্ষ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। লেবার পার্টির বেশ কিছু মুসলিম নেতা তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছেড়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিতে ক্ষমতায় এলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করাই হবে লেবারদের প্রধান কাজ। ব্রিটেনে শিশুদের মধ্যে দারিদ্র এখন চরমে। ফুড ব্যাঙ্কগুলির উপরে নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়ছে। এনএইচএসের পরিষেবাও ব্রিটেনের ভোটে বরাবরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর আয়করের কাঁটা তো আছেই। এই পরিস্থিতিতে স্টার্মারের উপর ব্রিটেনের আমজনতা কতটা আস্থা রাখছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী ৫ জুলাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 + 12 =